Powered By Blogger

Saturday 1 January 2022

 স্বপ্নবৃত্তান্ত

(সুমন চৌধুরী বিকু)

_________________

সেরাতে অদ্ভুত অদ্ভুত কিছু স্বপ্ন দেখেছি।বহুদিন নয়,আসলে বহুবছর পরপর এমন কোন রাত আসে যে রাতে খানিক পরপরই আমার ঘুম ছুটে যায়। আর বাকিদিন গুলোতে আমার ঘুম দেখে অন্যরা যারপরনাই হিংসে করে।আশ্চর্য্যের বিষয় ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল রাতে প্রলয়ংকরী সেই ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব পর্যন্ত আমার ঘুম ভাংগাতে পারেনি। যখন আমার বয়স ও যে খুব কম ছিল তা নয়। কুড়ি'র কাছাকাছিই ছিল। আরো আশ্চর্য হবার কথা যে ঘরে ঘুমাচ্ছিলাম সেটা কোন পাকা বা মাটির দালান ও ছিলনা। নেহায়েতই ছিদ্রযুক্ত একটা বেড়ার ঘর ছিল। তো যেদিন এমন স্বপ্ন দেখি সেদিন পাশেরজন ও কিন্তু নিরাপদ থাকেন না। স্বপ্নের প্রতিবাদী পর্বে যখন কাউকে শায়েস্তা করি তখন ঘোরের মাঝে কিল-ঘুষি-থাপ্পড়-লাথি ইত্যাদির একটা কিছু নিরাপরাধ পাশেরজনের উপর পড়বেই। আমার গিন্নীতো মাঝেমাঝে ছেলেকে বলে, " তোমার বাবা যে কখন আমায় ঘুমের মধ্যে এক লাথি- ঘুষিতে মেরে ফেলে তার কোন নিশ্চয়তা নেই।" সেরাতে এমনটা হতে গিয়েও কিভাবে জানি রক্ষা পেল।বুঝতে পারলাম যখন সে হঠাৎ বললো, " কি হয়েছে তোমার? এখনতো পড়ে যেতে। আরেকটু এপাশে সরে এসো।"

স্বপ্নে যেটা দেখলাম খুব কুৎসিত একটা ব্যাপার ঘটতে যাচ্ছে কারো সাথে। মৃদু বাধা দিলাম। কিন্তু নিবৃত্ত হচ্ছেনা লোকটা। শেষে মেজাজ সামলাতে না পেরে চরম উত্তেজিত হয়ে কয়েক ঘা দিতে গিয়েই সম্ভবত পাশেরজনের গায়ে আলতো লেগেছিল। স্বপ্নের কার্যকারণ নিয়ে বৈজ্ঞানিক ব্যখ্যা বিষয়ে আমার বিশদ ধারণা নেই। প্রচলিত কারণ হিসেবে যেটা শুনি, নিকট অতীতে কিংবা অতি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এবং শোনা কোন বিষয়ের একধরণের প্রভাব চিন্তাচেতনায় ও মস্তিস্কে পড়ে। আর অবচেতন মনে তারই প্রতিফলন স্বপ্নে দেখা যায়। যদি এমনটাই সত্যি হয় তাহলে বলা যায় মাত্র ক'দিন আগেই একজনের  কাছে সেরকম একটা ঘটনার কথা শুনেছিলাম, যিনি চাকরিসূত্রে প্রতিদিন  দীর্ঘপথ পাবলিক বাসে আসা যাওয়া করেন। যাই হোক, এই স্বপ্নের বিভিন্ন পর্বের কথা বলছিলাম; সারারাত ধরে দেখতে থাকা স্বপ্নের টুকরো টুকরো অংশে  রোমান্টিকতা,বিরহ,গা ছমছম করা ভয়,খুন,মৃত্যু,মারামারি,সন্ত্রাস,আন্দোলন,ভ্রমণ,এডভেঞ্চার থেকে শুরু করে কতো  কিছুইনা থাকে। বিচিত্র অনুভব এ স্বপ্নের।পরদিন যতোটা মনে থাকে জাবর কাটার মতো স্বপ্নগুলোকে চিবিয়ে চিবিয়ে অনুভব করতে থাকি। কখনো কখনো তো দুর্দান্ত রকমের ভাল একটা কবিতা পর্যন্ত লিখে ফেলি। যদি ঠিকঠাক মনে করতে পারতাম তো স্বপ্নে পাওয়া কবিতার দৌলতে বড়সড় নামকরা কবি হয়ে যেতে পারতাম! যেমন করে পাশের বাড়ির মিলন কাকার ছেলে সজল হঠাৎ একদিন সন্ধ্যাবেলা চিকন পাড়ের সফেদ একটা ধূতি পরে চৌধুরী পুকুরের গলাজলে ডুব দিয়ে এসে সেই ভেজা ধূতি না খুলেই ঘরের কোণায় থাকা পূর্বমুখী পুজোর আসনে বসে ধুপ মোমবাতি জ্বালিয়ে একটানা জিকির করার মতো মাথা ঝাঁকিয়ে " ধূপ-বাতি" " ধূপ-বাতি" বলে যাচ্ছিল; আর নিমিষেই গ্রামময় রটে গেল সজল স্বপ্নে মা'কে পেয়েছেন। হা ঈশ্বর!  তোমারই পৃথিবীতে তোমাকে নিয়ে  কতো রসিকতা! এইতো দিন দুই আগে একজন মহাতৃপ্তি আর গর্বের সাথে বলছিল,"আজ গুরুদেব বাঁচিয়েছেন বড় বিপদ থেকে।" তিনি বাসের পেছনের সিটে বসা ছিলেন।জানালা খোলা ছিল।আরেকটা বাস এসে আচমকা সেই বাসটির পেছনের অংশে সজোরে ধাক্কা দেয়। খোলা জানালায় হাত যদি বাইরে থাকতো তবে বড় একটা বিপদ নিশ্চিত হতো। হে ঈশ্বর, তোমার চেয়েও অধিক শক্তিশালী না জানি কতো গুরুদেব আছেন যাঁরা এমন রহস্যময় অদৃশ্য শক্তিবলে পরম কৃতজ্ঞচিত্ত ভক্তকূলকে বাঁচায়।

স্বপ্নের এমন বৈচিত্রতা,মাঝেমাঝে মনে হয় স্বপ্নটাই যদি বাস্তবতা হতো। আমি বহুবছর পর নয়, প্রতিদিন এমন স্বপ্ন দেখতে চাই। যে আয়নায় প্রতিফলিত হয়ে ওঠে অনেক কিছু; শ্মশ্মানচারী ভূত, অকুতোভয় যোদ্ধা, অবহেলিত পথশিশু, উচ্ছ্বিষ্টের নোংরা ভাগাড়, প্রেমিক-প্রেমিকার সমুদ্রবিহার, লোভাতুর লম্পট, ফুলমালি, জলের পরে জোড়া জোড়া সাপের  গা জড়ানো মৈথুনক্রিয়া কিংবা কুৎসিত নগ্ন মানুষ!

_______________________________

No comments:

Post a Comment

LAND MANAGEMENT

  The government's land acquisition activities and the subtle inconsistencies that remain deep (Suman Chowdhury Biku) --------------...