Powered By Blogger

Wednesday 5 January 2022

ভূমি ব্যবস্থাপনায় বাস্তব অসঙ্গতি ও প্রতিকূলতা, প্রসঙ্গঃ জাল দলিল ও দলিল জালিয়াতি

 ভূমি ব্যবস্থাপনায় বাস্তব অসঙ্গতি ও প্রতিকূলতা,প্রসঙ্গঃ জাল দলিল ও দলিল জালিয়াতি (Creation of fraudulent documents / deeds)

------------------------------------------------------------------ 

আমাদের দেশে যারা ভূমি ব্যবস্থাপনার মাঠপর্যায়ে কাজ করে কর্মক্ষেত্রে তাদের রক্ষাকবচ বলতে নূন্যতমও কিছু নেই।প্রতিমূহুর্তেই একটা খড়্গের নীচে ঘাড়টাকে সঁপে দিয়ে কাজ করে যেতে হয়।হয়তো এ প্রবাদটিই তাদের বেলায় প্রযোজ্য যে,"যত দোষ নন্দ ঘোষ।" দলিল জাল হোক, তাতেও যে বা যারা জাল করেছে তাদের কোন সমস্যা নেই,তবে সেই দলিল দিয়ে আপনার অজান্তে নামজারী হয়েছে তো ব্যস,যাবতীয় দায় এসে বর্তাবে আপনার উপর।অথচ এতো সূক্ষ্মভাবে এটা করা হয়,আপনার দেখে বুঝার কোন উপায়ও থাকেনা।আপনি যাচাই করার কথা বলেন,তবেই সেরেছে!তখন নিশ্চিত আপনি এই অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন যে,যাচাইয়ের নামে অযথা হয়রানি করছেন। যেটা বলছিলাম,জাল দলিলের কথা।যখন এরকম কোন ঘটনার অবতারণা হয় তখন যে দপ্তরটি দলিলের সূতিকাগার সে দপ্তর সংশ্লিষ্ট কারো কোন দায় আর সামনে আসেনা।সবাই সেই নামজারী নিয়ে হামলে পড়ে। অন্যদিকে কেতাবে অনেক কথা থাকলে ও বাস্তবে তা কাজীর গরুর মতোই।আইন-বিধির কথা যদি বলি,(১)sa&t act 1950 এর 150(l) ধারায় বলা আছে A revenue officer may, on application made in that on behalf of anybody interested or of his own motion review any order passed by himself or by any of his predecessor's in office under the part and in so reviewing any order may modify. এর আলোকে নিয়মিত এ ধরণের কাজ হয় বৈকি,কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে বিশেষ করে জাল দলিলের বেলায় ভিন্ন কোন কোন দপ্তর এসব আমলেই নিতে চায়না! (২)ভূমি মন্ত্রনালয় কর্তৃক ০২-০৯-২০১৪ খ্রিঃ তারিখ স্মারক নংঃ৩১.০০.০০০০.০৪২.৬৭.০৩১.১১.৫৮৫ মোতাবেক বিদ্যমান আইন অনুযায়ী চূড়ান্ত ভাবে প্রকাশিত রেকর্ড সংশোধন প্রসঙ্গে শিরোনাম যুক্ত বিষয় উল্লেখে জারীকৃত পরিপত্রে বলা আছে,রাজস্ব কর্মকর্তা(রেভেনিউ অফিসার) বা সহকারী কমিশনার( ভূমি) এসএএন্ডটি এক্ট'র ১৫০ ধারা এবং প্রজাস্বত্ব বিধিমালা ১৯৫৫ এর বিধি ২৩(৩) চূড়ান্ত ভাবে প্রকাশিত রেকর্ডের করণিক ভুল(clerical mistake) নিজেই সংশোধন করতে পারেন।যেমন নামের ভুল,অংশ বসানোর হিসাবে ভুল,দাগ সূচিতে ভুল,ম্যাপের সাথে রেকর্ডের ভুল ইত্যাদি। একই ভাবে fraudulent entry বা জালিয়াতির মাধ্যমে সৃষ্ট চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত রেকর্ড সংশোধনের জন্য প্রাপ্ত আবেদন বা প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রজাস্বত্ব বিধিমালা ১৯৫৫ এর বিধি ২৩(৪) অনুযায়ী রাজস্ব কর্মকর্তা রেকর্ড সংশোধনের জন্য বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। (৩) হ্যান্ডবুক ফর এসি ল্যান্ড বইয়ের ২১নং পাতায় ঘ.৪.৩ অনুচ্ছেদে বলা আছে,রাজস্ব কর্তৃপক্ষ নামজারী কার্যক্রমে কোন দলিলকে জাল বা অকার্যকরী বলে মন্তব্য করতে পারেন না।এরূপ প্রশ্ন করার এখতিয়ার রাজস্ব বিভাগের নেই[Asfauqe Hossain vs Bangladesh ;41 DLR (1989)364। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, এসব শুধু কথার কথা।কেউ এসব কথা আমলে যেমন নেয়না তেমনি কারো কর্ণকুহরে ও প্রবেশ করেনা।আপনি পাথরে মাথা ঠুকে মরেন,কারো কিচ্ছু যায় আসেনা।

বিপরীতে আইন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন রেজিষ্ট্রেশন বিভাগ যেন এসব থোড়াই কেয়ার করেনা!ওখানে সরকারের আদেশ নির্দেশকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে যা কিছু করা হয় তার সব দায় শেষে এসে পড়ে এখানটায়। ওখানে সংঘটিত অনিয়মের দ্বারা সৃজিত দলিলের মাধ্যমে যে ভুলের বীজ রোপণ করা হয়েছে সে বীজের অংকুরোদগম হয়ে বিষাক্ত ডালপালা সমূহ বিস্তৃত হয়ে কালো ছায়া ফেলে ভূমি প্রশাসনের অরক্ষিত সীমানায়।সংস্কারগুলো কেন বাস্তবায়ন হয়না,কেন সরকারের আদেশ নির্দেশগুলো উপেক্ষিত সে ব্যখ্যা কেউ চায়না।নিয়ম মেনে যদি ওখানে দলিল গুলো সম্পাদন হতো তবে আইনি জটিলতা অনেকখানি কমে যেতো। হালনাগাদকৃত রেজিষ্ট্রেশন আইনে পরিষ্কার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে,১) হাল নাগাদ মালিকানার সমর্থনে বিক্রেতার নামে রেকর্ড / খতিয়ান থাকতে হবে।অথচ রেকর্ড প্রচার বিহীন খতিয়ান ব্যতীত অহরহ দানপত্র দলিল সম্পাদন হচ্ছে। ২) অংশিদারি সম্পত্তিতে রেজিষ্টার্ড বন্টন নামা ব্যতীত মৌখিক আপোষবন্টন দেখিয়ে একাধিক দাগ উল্লেখক্রমে একটি দাগে হস্তান্তর করা হচ্ছে,যদিও রেকর্ড অনুযায়ী ও-ই দাগে বিক্রেতার সে পরিমাণ জমির মালিকানা স্বত্ব প্রচার নেই।এক্ষেত্রে অহরহ এ জাতীয় ঘটনা ঘটছে যে,কোন একটা মূল্যবান জমিতে অন্য অংশিদারদের বঞ্চিত করে কোন একজন অনৈতিক সুবিধা লাভের আশায় হস্তান্তর করছে।আর সে দলিলের ভিত্তিতে নামজারী করলে যেমন আপনি দোষী হবেন আবার না করলেও দোষী হবেন।করলে অন্য অংশিদাররা বলবেন বিক্রিত দাগে ও-ই পরিমাণ মালিকানা না থাকার পর ও আপনি কিভাবে নামজারীর সুপারিশ করলেন আর হস্তান্তরকারী এবং হস্তান্তর গ্রহীতা দুজনই বলবেন, রেজিষ্ট্রিযুক্ত দলিল থাকার পর ও আপনি কেন নামজারীর সুপারিশ করবেন না।অথচ কেউ এ প্রশ্ন তুলবেনা, যে দলিলটি সৃষ্টি হবার ফলে এতো জটিলতার উদ্ভব সে দলিলটা কেন সম্পাদন করা হলো!! (ক্রমশঃ) (৩) দাগের বিপরীতে বিক্রিত জমির পরিমাণ,হাত নকশা এবং সুস্পষ্ট চৌহদ্দি উল্লেখক্রমে দলিল সম্পাদনের বাধ্যবাধকতা থাকা স্বত্তেও এখনো সেই মান্ধাতা আমলের মতো একাধিক দাগের আন্দর.....পরিমাণ জমি বিক্রিত উল্লেখক্রমে দলিল সম্পাদন করা হচ্ছে।যার ফল স্বরূপ একজনের দখলীয় জমি অন্যজনের নামে নামজারী হয়ে যাবার সমূহ সম্ভাবনা থেকে যায়।বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যেটা দেখা যায়,ক্রেতাকে দখলের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি নিজেই বলতে পারেন না প্রকৃতপক্ষে কোন দাগে কি পরিমাণ জমি দখলে আছেন।এ ক্ষেত্রে আপনি সরেজমিন তদন্ত কিংবা সার্ভেয়ার দ্বারা দখল প্রতিবেদন চাওয়ার কথা বললেই বলা হয় অনৈতিক সুবিধা লাভের আশায় হয়রানি করা হচ্ছে।এরূপ অবস্থায়ও কেউ বলবেনা,নিয়ম মেনে কেন সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে দলিলটি সম্পাদন করা হলোনা! (৪)অনেক বছর পূর্বেই সরকারের তরফে বলা হয়েছে,দলিল সম্পাদন কালে দলিলের চার সেট দাখিল করতে হবে।তার একটি সাথেসাথে গ্রহীতাকে দেয়া হবে এবং একটি কপি এসি ল্যান্ড অফিসে পাঠানো হবে।কিন্ত কোথাও এরকম একটি দলিল সম্পাদন হয়েছে তার নজির সম্ভবত নেই। এতে করে সাথে সাথে দলিল না পাবার কারণে সার্টিফাইড কপিতে অহরহ জালিয়াতি সংঘটিত হচ্ছে।তার কিছু একটি সংঘবদ্ধ চক্রের মাধ্যমে আর কিছু অসাধু  দলিল লেখকদের দ্বারা হচ্ছে।যে সমস্ত কারণে এ-ই জালিয়াতির সুযোগ থাকছে তার মধ্যে প্রথমতঃ সার্টিফাইড কপির শুধুমাত্র প্রথম ও শেষ পাতায় সাব রেজিস্ট্রার স্বাক্ষর করলেও বাদবাকি পাতাগুলোতে স্বাক্ষর করার পরিবর্তে নীচের দিকে একটি টিকমার্ক দেয়া হয়।ফলে এখান থেকে কোন কোন পাতা সরিয়ে তার জায়গায় অন্য পাতা সন্নিবেশ করার যথেষ্ট সুযোগ থেকে যায়।দ্বিতীয়তঃ সার্টিফাইড কপি নকলনবিশ কর্তৃক স্বহস্তে লেখার বিধান থাকলে ও তা না করে তার পরিবর্তে সহজ উপায়ে সংশ্লিষ্ট দলিল লেখকের ডেস্কটপ ফোল্ডারে রক্ষিত কপি থেকে একটা কপি প্রিন্ট আউট করে সেটিই সার্টিফাইড কপি হিসেবে ইস্যু করা হয়।এবং তাদের মধ্যে প্রতিনিয়ত কাজের সুবাদে গড়ে ওঠা আন্তঃসম্পর্কের কারণে অনেক সময় সরল বিশ্বাসে যাচাই না করেই ইস্যু করা হয়।এতে অনেক অসাধু দলিল লেখক এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে জালিয়াতি করে থাকে।এ জাতীয় ঘটনা যখন সামনে আসে তখন সব দায় এসে পড়ে নকলনবিশের উপর, অন্যদিকে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় মূল অপরাধী।সেই তঞ্চকতাপূর্ণ দলিল দিয়ে আপনি না জেনে বুঝে নামজারী করেছেন তো,সেরেছে!মূল কারণ চাপা পড়ে যত দোষ হয়ে যাবে নন্দ ঘোষের! যে কারণে এসব বলা,এভাবেই তাদেরকে প্রতিনিয়ত চরম অনিশ্চয়তা আর ঘোর বিপদ মাথায় নিয়েই কাজ করে যেতে হয়।আমাদের প্রতিবেশী রাজ্য পশ্চিম বঙ্গ তথা ওপার বাংলার একটি দৈনিকে প্রকাশিত জাল দলিল সংক্রান্ত একটি খবর দেখেই এ লেখার অবতারণা। প্রশ্ন একটাই,তারা যদি এই সংকটটা উপলব্ধি করতে পারে আমরা কেন পারিনা!! https://www.anandabazar.com/amp/district/howrah-hoogly/district-administration-take-steps-to-prevent-fake-documents-of-lands-1.1111577

--------------------------------------------------------------------- 

সুমন চৌধুরী বিকু

গীতিকার,বাংলাদেশ বেতার

ই-মেইলঃ scbikuland@gmail.com

No comments:

Post a Comment

LAND MANAGEMENT

  The government's land acquisition activities and the subtle inconsistencies that remain deep (Suman Chowdhury Biku) --------------...