Powered By Blogger

Sunday 16 January 2022

হাটবাজার ব্যবস্থাপনা নীতির যুগোপযোগী পরিবর্তন ও প্রচলিত নীতি যথাযথ বাস্তবায়নের অভাবে বহুমুখী ক্ষতিসমূহ

 

হাটবাজার ব্যবস্থাপনা নীতির যুগোপযোগী পরিবর্তন ও প্রচলিত নীতি যথাযথ বাস্তবায়নের অভাবে বহুমুখী ক্ষতিসমূহ

সুমন চৌধুরী বিকু

----------------------------------------------------------------------------------------------------

হাটবাজার ব্যবস্থাপনার ভিত্তিমূলঃ  মানুষের প্রাত্যহিক জীবনধারণের চাহিদাজনিত বাস্তবতায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আদানপ্রদানের প্রয়োজনীয়তা থেকেই মূলতঃ হাটবাজার ব্যবস্থার প্রবর্তন সময়ের প্রয়োজনেই সেটি সেই প্রাচীনকাল থেকেই প্রতিষ্ঠিত ১৯৫০ সনে জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ত্ব আইন প্রবর্তনের পূর্বে যে সমস্ত হাট-বাজার ছিল সেগুলো তদকালীন জমিদার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এবং এ আইন প্রবর্তনের পরে সে সমস্ত হাট-বাজারের মালিকানা সরকারে বর্তায় এতদসংক্রান্ত মূল আইন জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ত্ব আইন ১৯৫০ এর ২০ ধারা এবং ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়েল ১৯৯০ এর ২২৪ - ২২৬ অনুচ্ছেদে হাট-বাজার ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যবস্থাপনা ন্যস্ত হবার বিষয়ে বলা আছে ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়েলের এ তিনটি অনুচ্ছেদ নিম্নরূপঃ

" * হাটবাজারসমূহ দুইটি সূত্র হইতে সরকারের মালিকানায় আনীত হইয়াছে জমিদারের খাস জমিতে জমিদার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হাট-বাজারসমূহ জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ এর ২০ ধারা মোতাবেক সরকারের মালিকানায় ন্যস্ত হইয়াছে ইহা ব্যতীত সরকারী খাস মহলের অন্তর্ভূক্ত জমিতে স্থানীয় জনসাধারণের সুবিধার্থে কালেক্টর কর্তৃক অনুমোদিত হাট-বাজারসমূহ প্রথম হইতেই সরকারের মালিকানায় চলিয়া আসিতেছে জমিদারী উচ্ছেদ পরবর্তীকালে স্থানীয় জনগণের সুবিধার্থে তাহাদের দাবী অনুযায়ী ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতেও কালেক্টরের অনুমোদনক্রমে হাট-বাজার প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে এই শেষোক্ত ক্ষেত্রে জমির মালিকগণ হাট-বাজারের জন্য প্রস্তাবিত এলাকার জমি কালেক্টরের নিকট রেজিষ্ট্রি দলিলমূলে হস্তান্তর করিয়াছেন

* যে সূত্রে বা যেখানেই প্রতিষ্ঠিত হউক না কেন, হাট-বাজার সম্পূর্ণরূপে ভূমি মন্ত্রণালয়ের মালিকানায় ন্যস্ত প্রতিষ্ঠাতা জমিদারের বা হাট-বাজার হিসাবে ব্যবহৃত জমি ব্যক্তি মালিকের মালিকানাধীন থাকিতে পারেনা যদি কোন প্রতিষ্ঠিত হাট-বাজারের সংলগ্ন এলাকায় হাট-বাজার সম্প্রসারিত হইয়া থাকে, তবে সরকারের পক্ষে কালেক্টর উক্ত জমি অধিগ্রহণ করিয়া হাট-বাজারভূক্ত করিবেন এবং এরূপ সম্প্রসারিত হাট-বাজার এলাকায় ব্যক্তি মালিক টোল আদায় বা কোন প্রকার অর্থ আদায় করিতে পারিবেনা

* কালেক্টর এবং উপজেলা সহকারী কমিশনার তাহার এলাকাস্থ সকল হাট-বাজারের তালিকা সংরক্ষণ করিবেন এবং সায়রাত মহাল রেজিষ্ট্রারে যথারীতি লিপিবদ্ধ করিবেন হাট-বাজারের পেরীফেরী বা চৌহদ্দি/চতুঃসীমা সঠিকভাবে বর্ণনা করিয়া উহার পরিমাণ সম্বলিত একটি ম্যাপ সংরক্ষণ করিবেন সার্ভেয়ার দ্বারা প্রয়োজন হইলে হাট-বাজার নকশা সংরক্ষণ করা একান্ত প্রয়োজন জরিপকালে মৌজা ম্যাপে এবং খতিয়ানে হাট-বাজারের রেকর্ড সঠিকভাবে প্রণয়নের জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাট-বাজারের পেরীফেরী এবং তদসংক্রান্ত তথ্যাদি সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসারকে সরবরাহ করিবেন এবং ম্যাপ ও খতিয়ান সঠিকভাবে প্রণীত হইয়াছে কিনা তাহার প্রতি লক্ষ্য রাখিবেন"

বিভিন্নসময়ে ব্যবস্থাপনাজনিত নীতি পরিবর্তনঃ দেখা যায় জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ত্ব আইন প্রবর্তন পরবর্তী সময়ে প্রয়োজন অনুযায়ী The hats and bazars (establishment and acquisition) ordinance, 1959 জারি করা হয় পরবর্তীতে ১৯৭০ সনে Office of the board of the revenue, Dhaka কর্তৃক  Establishment of new hat bazars শিরোনামে একটি পরিপত্র জারী করা হয় ওই পরিপত্রও নতুন হাট-বাজার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মূলতঃ জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ত্ব আইন এর ২০ ধারারই পুনরাবৃত্তি এরপরে ০২/১১/১৯৭৮ তারিখে স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রণালয় কর্তৃক Transfer of hat, bazars, feries and ponds/tanks to union parishads/ pourashavas and Dhaka municipal corporation শিরোনামে এবং একই মন্ত্রণালয় কর্তৃক ১৩/০৩/১৯৮৪ তারিখে সরকারী হাটবাজার হতে প্রাপ্ত আয় উপ্জেলা পরিষদ / পৌরসভা/ পৌর কর্পোরেশন এর মধ্যে বন্টন একটি নির্দেশিকা জারি করা হয় এতে এ বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে যে, ইজারা ব্যতিত হাটবাজার ব্যবস্থাপনাজনিত অন্যান্য যাবতীয় বিষয় জেলা প্রশাসনের নিকট থাকবে

অন্যদিকে আমরা দেখি সরকারের খাস জমিতে গড়ে ওঠা বাজারের পাশাপাশি সরকারী বিভিন্ন সংস্থার জমিতে বিশেষ করে রেলওয়ে ও সড়ক বিভাগের জমিতে বিভিন্নসময়ে প্রচুর বাজার গড়ে উঠেছে বিগত ০৭/১০/১৯৮৪ তারিখ মন্ত্রি পরিষদ বিভাগ কর্তৃক সকল রেলওয়ে বাজার সংশ্লিষ্ট পৌর সংস্থাসমূহের নিকট হস্তান্তর করার সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাস্তবায়ন করার নির্দেশনা দেয়া হয় এবং বরাবরের মতো এটাও স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়, যে জমির উপর উপর বাজার অবস্থিত তার মালিকানা ভূমি মন্ত্রণালয়ে বর্তাবে এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে বাজার উন্নয়নের জন্য নির্মাণ কার্য করতে হবে

নির্দেশনা বাস্তবায়নজনিত ব্যত্যয়সমূহঃ  সরকারের যাবতীয় নির্দেশনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব মূলতঃ মাঠ পর্যায়ে যারা কাজ করে তাদের উপর থাকলেও বেশীর ভাগ নির্দেশনা শুধু কাগজপত্রেই সীমাবদ্ধ থাকতে দেখা যায় এবং কিছুদিন পরে একই বিষয়ে নির্দেশ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষকেই পুনরায় বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিতে হয় তেমনি করে  ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক ০৭/১০/১৯৯৫ তারিখ জারিকৃত এক পত্রে এরকমই স্মরণ করিয়ে দেয়ার বিষয় দেখা যায়

উপরোক্ত মতে যেটি দেখা যায়, হাট-বাজারের ব্যবস্থাপনাজনিত বিষয়ে বারবার সিদ্ধান্ত বদলের অজুহাতে মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা বাস্তবায়নে অনেকখানি অনীহা ছিল বিভিন্ন সময়ে একাধিক জেলা থেকে নানা বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠি থেকে এর প্রমাণ পাওয়া যায়

হাটবাজারের অভ্যন্তরীণ ও চৌহদ্দিভূক্ত জমি ব্যবস্থাপনাঃ  সাধারণতঃ হাটবাজারের অভ্যন্তরে মূল কেন্দ্রস্থলে থাকা যে পরিমাণ খাস জমি ঘিরে হাট প্রতিষ্ঠিত হয় সেটিকে তোহাবাজার হিসেবে এবং তার বাইরের যে জমি তাকে চান্দিনা ভিটি হিসেবে অভিহিত করা হয় তোহা বাজারে মূলতঃ ভাসমান বিক্রেতাগণ অস্থায়ীভাবে তাদের পণ্য মজুদপূর্বক বিক্রি করে থাকেন

এছাড়া এর বাইরে বাজারের অভ্যন্তরে এবং চৌহদ্দিভূক্ত সম্প্রসারিত অংশে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে যে সমস্ত দোকানপাট থাকে সেগুলো বাজারের সীমানাভুক্ত অংশ হিসেবে বিবেচিত হয় অন্যদিকে তোহা বাজারের নির্ধারিত অংশের বাইরে যে সমস্ত খাসজমি থাকে সেগুলোকেও চান্দিনা ভিটি হিসেবে চিহ্নিত করে সেখান থেকে প্রত্যেকজনকে  ০.০০৫০ শতাংশ পরিমাণ জমিতে অস্থায়ী কাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনার জন্য একসনা বন্দোবস্ত প্রদানের বিধান রয়েছে; যেখানে কোনরূপ স্থায়ী অবকাঠামো তৈরি করা যাবেনা বিধি মোতাবেক উপজেলা এবং সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিস হাট এলাকা সরেজমিন পরিমাপের মাধ্যমে ট্রেসম্যাপ প্রস্ততক্রমে তাতে তোহা বাজার, একসনা বন্দোবস্তযোগ্য্ জমি এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন চান্দিনা ভিটি চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে প্রতিটি বাজারের পেরীফেরী নির্ধারণ এবং তাতে জেলা প্রশাসকের অনুমোদন নিয়ে সংরক্ষণ করার কথা বলা আছে এ কাজটি নিয়মিত কিংবা বাস্তবতা অনু্যায়ী নির্দিষ্ট সময় পরপর হালনাগাদ করার কথা থাকলেও তা করা হয়না বললেই চলে ফলে একদিকে যেমন অপরিকল্পিতভাবে বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে, সরকারী চান্দিনা ভিটি দখল করে তাতে অবৈধ অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে তেমনি দিনে দিনে তোহা বাজারের জমি ও অবৈধ দখলের ফলে ভাসমান পণ্য বিক্রির স্থান সংকুচিত হয়ে আসছে ফলে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, বিক্রেতাগণ বাধ্য হয়ে তাদের পসরা নিয়ে পার্শ্ববর্তী সড়ক মহাসড়কে কিংবা যত্রতত্র বিক্রির জন্য বসে যাচ্ছে এতে করে সড়কে নিয়মিত যানজট সহ ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা

বাস্তবতা লক্ষ্য করলে দেখা যায়, বর্তমান প্রেক্ষিতে ০.০০৫০ শতাংশ জমি একসনা বন্দোবস্তের বিষয়টি একেবারেই কোন কার্যকর পদক্ষেপ নয় কেননা সময়ের চাহিদা অনুযায়ী এটুকু সামান্য আয়তনের জমিতে কেউ ব্যবসা করতে আগ্রহী হয়না তদুপরি এরূপ বন্দোবস্ত প্রদান কার্যক্রম শুরুর পূর্বে জেলা প্রশাসক কর্তৃক পেরীফেরী মামলা অনুমোদনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে যেহেতু বাস্তব অবস্থা অনুযায়ী বাজার পেরীফেরীই করা হচ্ছেনা সেহেতু বন্দোবস্ত কার্যক্রমও স্থবিরপ্রায় পক্ষান্তরে সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবৈধ সুবিধা ভোগ করছে স্থানীয় প্রভাবশালী গোষ্ঠি এবং ক্ষেত্রবিশেষে সন্ত্রাসী ও অসাধু রাজনৈতিক ব্যক্তিগণ তারা সরকারী ওই জমি দখল করে মোটা অংকের টাকা নিয়ে ব্যবসায়ীদের নিকট ব্যবসা করার জন্য ভাড়া দিচ্ছে এক্ষেত্রে একসনা বন্দোবস্ত নীতি থেকে সরে এসে যদি বাজারের অভ্যন্তরে থাকা সরকারী খাসজমিতে পরিকল্পিত বহুতল ভবন নির্মাণ করে নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদেরকে বরাদ্দ দেয়া হতো তাহলে সরকারী জমি রক্ষা হবার পাশাপাশি আরো বহুমূখী সুফল পাওয়া যেতো এতে করে সরকার নিশ্চিতভাবে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পেতো, পরিকল্পিত ও পরিবেশসম্মত বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠতো, সড়ক মহাসড়কের পাশে বসে পণ্য বেচাকেনার প্রয়োজন হতোনা এবং স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠি তদের অনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার সুযোগ পেতোনা

ইজারা ব্যবস্থাপনা, নতুন হাট-বাজার ঘোষনা  ইত্যাদিঃ ব্যবসাক্ষেত্র হিসেবে হাটবাজারসমূহ মূলতঃ যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধা সম্বলিত স্থানেই গড়ে ওঠেআমাদের দেশেও ইতোপূর্বে যে সমস্ত হাটবাজারমূহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেগুলো বেশিরভাগই নদী ও খাল তীরবর্তী এলাকায় এবং কিছু কিছু সে সময়কার জমিদারের ইচ্ছায় তাদের নির্ধারিত স্থানে গড়ে উঠেছিল যেহেতু সেসময়ে অবকাঠামোগত দিক দিয়ে সড়ক ব্যবস্থা একেবারেই উন্নত ছিলনা তাই নদী সংলগ্ন এলাকাই প্রাধান্য পেয়েছিল কিন্তু কালের ধারাবাহিকতায় বর্তমানে সে বাস্তবতা নেই

নদী সংলগ্ন এলাকার পাশাপাশি এখন মূলতঃ সড়ক মহাসড়ক ঘিরেই বাজার ব্যবস্থা সম্প্রসারিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত ফলে যেটা দেখতে পাই, বাস্তব প্রেক্ষিতে পূর্বের বেশীরভাগ বাজারই বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায় তার বিপরীতে বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠছে নিত্যনতুন হাটবাজার এসব হাটবাজারসমূহকে চিহ্নিত করে নতুন হাটবাজার হিসেবে ঘোষণা ইজারার আওতায় আনার মূল দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের আওতাধীন ইউনিয়ন উপজেলা ভূমি অফিসের হাতে ন্যস্ত থাকলেও তারা কাজটি যথাযথভাবে করছে এমন নজির কোথাও নেই বললেই চলেবরং কোন আমলে কোন একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সায়রাত মহাল রেজিষ্টারে সেসময়ের 'টা হাটবাজারকে সেই যে রেজিষ্টারে অন্তর্ভূক্ত করে গেছেন, সেগুলোকেই আজীবন আঁকড়ে ধরে বসে আছেন অথচ খবর নিলে দেখা যাবে সেসব হাটবাজারের অনেকগুলো কালের বাস্তবতায় ইতোমধ্যে হারিয়ে গেছে এদিকে সরকারের রেকর্ডে এসব এখনো বহাল মর্মে রেকর্ডভূক্ত রয়ে গেছে এবং দিনের পর দিন এই রেকর্ডকে আগলে ধরে কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে স্বাভাবিকভাবেই প্রতিবছর ইজারা তালিকায়/বিজ্ঞপ্তিতে এগুলোর নাম আসছে অথচ ইজারা হচ্ছেনা তার অন্যতম যে কারণটি, সরকারী নীতিমালা মোতাবেক যে কোন হাটের বিগত তিন বছরের ইজারামূল্যের যে গড় মূল্য দাঁড়ায়, সে মূল্যের বেশী পরিমাণ ইজারামূল্য সরকারী মূল্য হিসেবে নির্ধারিত হতে হবে এবং কোনভাবেই তার চাইতে কম মূল্যে ইজারা দেয়া যাবেনা ফলে যেটি হচ্ছে, মৃতপ্রায় এসব বাজারগুলো কেউই ইজারা নিতে আগ্রহী হয়না এবং অবধারিতভাবেই এসব বাজারের খাস কালেকশনের দায়িত্ব বর্তায় ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলোর উপরঅথচ আন্তরিক উদ্যোগ নিয়ে এসব বাজার বিলুপ্ত ঘোষনার পাশাপাশি নতুন গড়ে ওঠা বাজারগুলোকে ইজারার আওতায় আনার ব্যবস্থা করা হলে সেসব বাজারে সরকারী নিয়ন্ত্রণ যেমন প্রতিষ্ঠা হত তেমনি সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পেতোসরেজমিন খোঁজ নিলে দেখা যাবে এমন কোন উপজেলা নেই যেখানে সরকারের রেকর্ডে থাকা বর্তমান বাজার তালিকার বাইরে অন্তত অনধিক পনেরো থেকে বিশটি নতুন বাজার গড়ে ওঠেনি

ক্ষতিগ্রস্ত সরকার, লাভ হচ্ছে তৃতীয় পক্ষেরঃ  প্রথমেই আসা যাক ইজারা না হওয়া বাজারগুলোর খাস কালেকশান বিষয়েসরকারী নিয়ম মোতাবেক খাস কালেকশানের দায়িত্ব ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপর হলেও সেটি মূলতঃ কাগজপত্রেই বিদ্যমান থাকেতার প্রধাণ কারণ স্থানীয় প্রভাবশালী গোষ্ঠী এবং রাজনৈতিক দলের নিয়ন্ত্রণতার পাশাপাশি ইউনিয়ন ভূমি অফিসসমূহে লোকবলের অপ্রতুলতা কারণে সদিচ্ছা থাকা স্বত্ত্বেও তারা খাস কালেকশনের কাজটি করে উঠতে পারেননা এবং বাধ্য হয়ে বাজারের পুরনো ইজারাদার কিংবা সেসব গোষ্ঠীর উপর নির্ভরশীল হতে হয়এতে করে মূলতঃ তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী যে পরিমাণ টোল আদায় দেখানো হয় তাই নিয়েই বাধ্য হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় এর বাইরে এলাকা ভিত্তিক সিন্ডিকেট প্রথা হয়ে গেছে এই ইজারা সংস্কৃতির অংশ এলাকাভিত্তিক উল্লেখিত প্রভাবশালী এবং রাজনৈতিক দলের নেতৃস্থানীয়রা নিলামডাকের পুর্বে নিজেদের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে নির্ধারিত সরকারী মূল্যে বাজার ডাক না হবার উপায় বের করে নেয় অর্থাত সমঝোতা অনুযায়ী তারা কেউই সরকার নির্ধারিত মূল্যে টেন্ডার ড্রপ করেনাদেখা যায় একেকটি বাজার তৃতীয়- চতুর্থবারের মতো টেন্ডার দেয়ার পর নির্ধারিত মূল্য না পাওয়ায় ইজারা হয়না

এবং কম মূল্যে ইজারা দেয়ার দায় কর্তৃপক্ষ নিতে চায়না বলে বাজারগুলোও শেষপর্যন্ত ইজারা হয়নাঅবশেষে বাধ্য হয়ে খাস কালেকশনের পথেই হাঁটতে হয় এবং পক্ষান্তরে লাভবান হয় সেসব সিন্ডিকেট

উপসংহারঃ এমন অবস্থায়  কর্তৃপক্ষের যে বিষয়গুলো আশু করণীয়, কতগুলো বাজার বর্তমানে বিলুপ্ত ঘোষণার যোগ্য তার সঠিক তথ্য সংগ্রহ করে বিলুপ্ত ঘোষণার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা কোন এলাকায় কতটি নতুন ঘোষণা এবং ইজারাযোগ্য বাজার গড়ে উঠেছে এবং তাতে কি পরিমাণ রাজস্ব আয় হতে পারে তার সঠিক তথ্য

সংগ্রহ করে ইজারার আওতায় আনাএছাড়া ক্রাশ প্রোগ্রামের মাধ্যমে বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত বাজারসমূহের পেরিফেরী সম্পন্ন করে তোহা বাজারগুলোতে সরকারী উদ্যোগে ভাসমান বিক্রেতাদের জন্য উর্ধ্বমুখী ভবন নির্মাণক্রমে

বিক্রয়ের স্থান নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি সরকারের নজরে আনাসরকারী মালিকানাধীন চান্দিনা ভিটিগুলো একসনা ইজারা না দিয়ে সরকারী ব্যবস্থাপনায় বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা বর্তমানে গড়ে ওঠা বাজারগুলোতে সরকারী নিয়ন্ত্রণ না থাকায় যেটি হচ্ছে, এখানে পরিকল্পিত দোকানপাট গড়ে উঠছেনাএকটি বাজারে ড্রেন, পানি নিষ্কাশন পয়ঃ নিষ্কাশনের পরিকল্পিত যেসব ব্যবস্থা থাকা দরকার সেসব হচ্ছেনা বলে পরিবেশগত ক্ষতি বাড়ছে এবং বাজারগুলোতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বৃদ্ধি পাচ্ছে সামাজিক অস্থিরতা এছাড়া সবক'টি বাজারে যত্রতত্র তথা সড়ক মহাসড়কে পসরা সাজিয়ে বসার ফলে যানজট, সড়ক দুর্ঘটনা ইত্যাদি বৃদ্ধি পাবার ফলে বাড়ছে জনদুর্ভোগ সবচেয়ে যে বিষয়টি জরুরী সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের সমন্বয়ে একটি যুগোপযোগী নতুন নীতিমালা প্রণয়নসহ হাট-বাজারের ত্রিমূখী ব্যবস্থাপনা নীতির বদলে একমুখী আধুনিক সময়োপযোগী ব্যবস্থাপনা নীতি প্রবর্তন করা

----------------------------------------------------------------------------------------------------

সুমন চৌধুরী বিকু

গীতিকার, বাংলাদেশ বেতার

-মেইলঃ scbikuland@gmail.com

No comments:

Post a Comment

LAND MANAGEMENT

  The government's land acquisition activities and the subtle inconsistencies that remain deep (Suman Chowdhury Biku) --------------...