Powered By Blogger

Saturday 1 January 2022

 

সরকারের জমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম এবং গভীরে থেকে যাওয়া সূক্ষ্ণ অসঙ্গতিসমূহ

(সুমন চৌধুরী বিকু)


ধরে নিলাম কোন এলাকায় সড়ক জনপথ বিভাগের অনুকূলে কিছু জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত মালিকগণ যথারীতি প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ তুলে নিয়েছেন পরবর্তীতে সে অঞ্চলে ভূমি জরিপ কার্যক্রম শুরু হয় কিন্তু সংশ্লিষ্ট দপ্তর তথা সড়ক জনপথ বিভাগ মাঠ জরিপ চলাকালে জরিপকারী টিমের নিকট অধিগ্রহণ মূলে তাঁদের মালিকানার স্বপক্ষীয় কাগজপত্রসমূহ  উপস্থাপন না করায় অধিগ্রহণকৃত জমির মালিকানা পুনরায় পূর্বতন মালিকগণের নামে অন্তর্ভূক্ত হয়ে চূড়ান্ত রেকর্ড তাদের নামে প্রচারিত হয়েছে এবং জরিপ কর্যক্রম সম্পন্ন হবার পর চূড়ান্ত রেকর্ডসমূহের কপি ভূমি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ তথা রাজস্ব দপ্তরের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে ফলে রাজস্ব কর্তৃপক্ষ জানেনা যে, এই জমি সরকারী কোন সংস্থার নামে অধিগ্রহণকৃত জমি যেহেতু সড়ক জনপথ বিভাগ কখনো ওই জমির গেজেটের কপি দিয়ে নামজারীর আবেদন করেনি বা ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করেনি সেহেতু রাজস্ব কর্তৃপক্ষের কখনো কোনভাবে জানার সুযোগ হয়নি যে, এই জমি অধিগ্রহণকৃত জমি ব্যতিক্রম শুধু এটুকুই, রাজস্ব দপ্তরের সচেতন কোন কর্মকর্তা কখনো কোন সূত্রে বিষয়ে জানতে পারলেই শুধু তিনি রেকর্ডের কোথাও বিষয়টি নোট করে রাখেন

এর ফলে যে সমস্যাগুলো সাধারণতঃ হয়ে থাকে, পূর্বতন মালিকদের কেউ অসাধু মনোবৃত্তির হলে তারা নানাভাবে এর অপব্যবহার করে থাকেন যার মধ্যে রেকর্ডীয় মালিকের মৃত্যুতে ওয়ারিশ সূত্রে নামজারীর মাধ্যমে পৃথক জোত খতিয়ান সৃজন করে মূল রেকর্ডের পরিবর্তন সাধিত করে করেন অথবা সংস্থা কর্তৃক অধিগ্রহণকৃত  জমি দীর্ঘদিন অব্যবহৃত অবস্থায় থাকার সুযোগে প্রচলিত রেকর্ডের অনুবলে পুনরায় বিভিন্নজনের নিকট বিক্রি করেন, কিংবা কোন অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠানের নিকট বন্ধক রাখার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেন এরকমভাবে রেকর্ড পরিবর্তন, বিক্রি এবং মর্টগেজ রেখে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার মতো অনেক ঘটনা আমরা বিভিন্নসময়ে দেখেছি

খুব সম্প্রতি প্রিন্ট মিডিয়ার অনুসন্ধানে উঠে আসা দু'টি ঘটনার উদাহরণ দেয়া যায়

প্রথমটি হচ্ছে গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের অনুকূলে অধিগ্রহণকৃত জমি জনৈক ব্যক্তি কর্তৃক একটি ব্যাংকে মর্টগেজ দেয়ার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন আর অপরটি হচ্ছে, কক্সবাজারে পিবিআইয়ের অনুকূলে অধিগ্রহণকৃত জমির মধ্যে কিছু জমি ইতোপূর্বে সড়ক জনপথ বিভাগের নামে অধিগ্রহণকৃত জমি হওয়া স্বত্তেও পুনরায় পিবিআইয়ের নামে অধিগ্রহণ করা হয়েছে

উপরোক্ত আলোচনা থেকে বাকি সব বিষয়ের বাইরে প্রথমেই যে বিষয়টি উঠে আসে,শুধুমাত্র যথাসময়ে অধিগ্রহণকৃত জমি সংশ্লিষ্ট সংস্থার নামে রেকর্ড হালনাগাদ না হবার কারণেই অর্থাৎ সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে জাতীয় ঘটনা ঘটার সুযোগ থেকে গেছেসরকার কর্তৃক জারীকৃত "সড়ক জনপথ অধিদপ্তরের সমন্বিত ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০১৪" অনুযায়ী দেখা যায়, নীতিমালার দ্বিতীয় অধ্যায়ে নং অনুচ্ছেদের . . উপ-অনুচ্ছেদে অধিগ্রহণকৃত জমির নামজারী জমাখারিজ করে ভূমির খতিয়ান হালনাগাদকরণকরে সংগ্রহ সংরক্ষণ এবং ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধকরণের বিষয়ে সুষ্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে উপরের দুইটি ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, প্রথমোক্তটির ক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনার নিম্নোক্ত অসঙ্গতিসমূহ প্রণিধাণযোগ্য


(কেস স্টাডি-০১)

) অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হবার পর প্রকাশিত গেজেটের কপি দিয়ে সড়ক জনপথ অধিদপ্তর রেকর্ড হালনাগাদকরণ তথা নামজারীর উদ্যোগ গ্রহণ করেননি

) ভূমি উন্নয়ন কর অধ্যাদেশ'১৯৭৬ জারী হবার পর থেকে সরকারী সংস্থাসমূহের মালিকানাধীন জমির ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের বিধান চালু করা হয়েছে এটি স্পষ্ট যে, সংশ্লিষ্ট সংস্থা কখনো ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের উদ্যোগ গ্রহণ করেনি

) চূড়ান্ত জরিপ কার্যক্রম সম্পন্ন হবার পরেই জরিপ অধিদপ্তর কর্তৃক জরিপ কার্যক্রম সম্পন্ন হবার ফলে চূড়ান্ত রেকর্ডে সংশ্লিষ্ট জমির রেকর্ডিয় শ্রেণি "রাস্তা" হিসেবে লিপিবদ্ধ না হয়ে পূর্বের শ্রেণি হিসেবেই রেকর্ড হয়ে যায়

) অসাধু মনোবৃত্তির  পূর্বতন মালিক কিংবা তাঁর ওয়ারিশ/ওয়ারিশগণ তাদের নামে পুনরায় রেকর্ড প্রচার হয়ে যাবার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তথ্য গোপনের মাধ্যমে প্রচারিত রেকর্ডের বিপরীতে স্বনামে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের মাধ্যমে মালিকানা দখলের প্রমাণক হিসেবে ব্যাংকে দাখিলপূর্বক বিপুল পরিমাণ ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাত করেন

     খবরের বরাতে জানা গেছে এর পেছনে দায়ীদের চিহ্নিত করতে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে পরবর্তীতে নিশ্চয় জানা যাবে এর পেছনে কে বা কারা দায়ী হয়তো প্রকৃত দায়ী অভিযুক্ত না হয়ে উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপবে; যদিও আশা করবো এমনটি যেন না হয়

আমরা সাধারণের মতো যদি ভাবি তাহলে বিষয়গুলো মাথায় রেখেই তদন্ত কার্যক্রম এগিয়ে নিতে হবে

) অধিগ্রহণ ওই এলাকায় চূড়ান্ত জরিপ কার্যক্রম শুরুর আগে হয়েছে নাকি পরে হয়েছে? যদি আগে হয়ে থাকে তবে সংশ্লিষ্ট সংস্থা কর্তৃক জরিপ কার্যক্রম চলাকালে যদি রেকর্ডপত্র উপস্থাপন না করা হয় তদুপরি জরিপকারী টিম নিশ্চয় দেখেছেন যে এটি সরেজমিনে অর্থাত বাস্তবে "ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক",সেহেতু মৌজা নকশায় নিশ্চিতভাবে এটি সড়ক হিসেবে অংকিত হয়েছে এবং যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে সড়ক শ্রেণির জমি কখনো জরিপ কর্তৃপক্ষ ব্যক্তির নামে রেকর্ড করে দিতে পারেননা এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংস্থা কর্তৃক যথাসময়ে কাগজপত্র উত্থাপন না করলেও জরিপকারী কর্মকর্তার উচিত সরকারী স্বার্থে কাগজপত্র উপস্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে বিষয়ে পত্র মারফত জানানো এক্ষেত্রে যদি তাই না করা হয়ে থাকে তো অবশ্যই জন্য সংশ্লিষ্ট সেটেলমেন্ট অফিসার দায়ী হবেন

আর যদি অধিগ্রহণ কার্যক্রম চূড়ান্ত জরিপ শেষ হবার পর হয়ে থাকে তবে অবশ্যই এর জন্য সেটেলমেন্ট কর্মকর্তাকে দায়ী করার কারণ নেই মর্মে প্রতীয়মান হয় জন্য অবশ্যই সড়ক জনপথ বিভাগকে দায়ী করা উচিত যেহেতু তাঁরা যথাসময়ে ভূমি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে রেকর্ড পরিবর্তনের উদ্যোগ গ্রহণ করেননি

প্রশ্ন উঠতে পারে ভূমি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কি করে ভূমি মালিকের কাছ থেকে ভূমি উন্নয়ন কর গ্রহণপূর্বক রশিদ প্রদান করলেন, যেটি তিনি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বরাবরে দাখিলক্রমে মালিকানা এবং দখল প্রমাণে সমর্থ হলেন ভূমি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ সাধারণতঃ তাদের নিকট সংরক্ষিত রেকর্ড অনুসরণ করেই যাবতীয় কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকেন যেহেতু এই জমির ভূমি উন্নয়ন কর গ্রহণ করা হয়েছে সেহেতু বুঝা যাচ্ছে প্রচলিত রেকর্ডে এই জমি "সড়ক" শ্রেণি হিসেবে লিপি নেই কেননা "সড়ক" শ্রেণি হিসেবে লিপি থাকলে কখনোই রেকর্ডীয় ভূমি মালিকের কাছ থেকে এই শ্রেণির জমির ভূমি উন্নয়ন কর গ্রহণ করতেন না

তাই ক্ষেত্রে ভূমি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কোন দায় থাকতে পারে বলে মনে হয়না অন্যদিকে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কথা যদি বলি,আমরা যারা মনে করি খুব সহজেই তাঁরা মুখে বলার মতো করে ঋণ দিয়ে দেন,আসলে কিন্তু তা নয় প্রকৃতপক্ষে তাঁরা সবকিছু অনুপূঙ্খ যাচাই-বাছাই করে কোন জমির বিপরীতে ঋণ প্রদান করে থাকেন এবং এক্ষেত্রেও নিশ্চয় উনারা তাই করেছেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গিয়ে রেকর্ড মিলিয়ে দেখেছেন, খাজনার দাখিলা যাচাই করেছেন, অন্য কোন ভাবে হস্তান্তর হয়নি মর্মে রেজিষ্ট্রেশন বিভাগ থেকে অনাপত্তি সনদ নিয়েছেন কিংবা সরেজমিনে ওই জ়মি পরিদর্শন করেছেন তাহলে প্রশ্ন আসে এতো কিছুর পরও কি করে এটা হলো! উপরোক্ত বিষয়সমূহ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়,যেহেতু মূল রেকর্ড সড়ক বিভাগের নামে না হয়ে পূর্ববর্তী মালিকের নামে রয়ে গেছে সেহেতু মালিকানার বিষয়টি এবং ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের বিষয়টি বুঝতে পারার কোন অবকাশ ছিলনা এবং অধিগ্রহণের বিষয়টির সাথে যেহেতু রেজিষ্ট্রেশন বিভাগ সম্পর্কিত নয় সেহেতু অনাপত্তি সনদ পাওয়ার ক্ষেত্রেও কোন বাধা ছিলনা বাকী থাকে সরেজমিন পরিদর্শনের বিষয়টি যদি পরিদর্শনকারী কর্মকর্তা কর্তৃক যথাযথভাবে জমিটি চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে পরিদর্শন করতেন তাহলে অবশ্যই জমিটি সড়ক হিসেবে থাকার ব্যাপারটি কখনোই দৃষ্টি এড়িয়ে যেতনা,পাশাপাশি এমন তুঘলকি কান্ড ঘটতোনা

উপরোক্ত মতে যে বিষয়টি সামনে আসে, তদন্তের ক্ষেত্রে অধিগ্রহণকৃত জমিটি চূড়ান্ত জরিপ কার্যক্রম শেষে গেজেট আকারে রেকর্ড প্রকাশিত হবার আগে অধিগ্রহণ করা হয়েছে নাকি পরে হয়েছে এই বিষয়টিকে ভিত্তিমূল ধরেই দায়ীদের চিহ্নিত করার কাজ এগিয়ে নিতে হবে যদি অধিগ্রহণ আগে হয়ে থাকে তবে জমিটির পূর্ববর্তী মালিকের পাশাপাশি সড়ক জনপথ বিভাগ, সেটেলমেন্ট কর্তৃপক্ষ এবং ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলগণ কম-বেশী দায়ী হবেন আর যদি অধিগ্রহণ পরে হয়ে থাকে তবে সেক্ষত্রে দায়টা সেটেলমেন্ট কর্তৃপক্ষ ব্যতীত অন্যদের হবার কথা


(কেস স্টাডিঃ ০২) - দ্বিতীয় যে ঘটনাটি সেটি সম্প্রতি চ্যানেল ২৪ এর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন থেকে উঠে এসেছে, কক্সবাজারের শহরতলীতে একটি মৌজায় "পিবিআই"  অনুকূলে অধিগ্রহণকৃত জমির মধ্যে কিছু জমি ইতোপূর্বে সড়ক জনপথ বিভাগের অনুকূলে অধিগ্রহণকৃত জমি হওয়া স্বত্তেও পুনরায় এই অধিগ্রহণ প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে অর্থাত একবার এই জমির বিপরীতে সরকার থেকে ক্ষতিগ্রস্ত মালিকপক্ষ প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলেন তদুপরি এরূপ পুনঃঅন্তর্ভূক্তির কারণে ভূমি মালিক পুনরায় সরকারী অর্থ গ্রহণ করেছেন প্রশ্ন যেটা সামনে আসে কি কারণে এরূপ কান্ড ঘটলো!

প্রথমতঃ দেখা যাক, সরকারের অধিগ্রহণ নীতিমালা কি বলে তারমধ্যে প্রযোজ্য গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো তুলে ধরা হলো প্রথমতঃ আইনের ধারা- এর উপধারা () অনুযায়ী জেলা প্রশাসক নির্ধারিত জমির যৌথ তালিকা প্রস্তুত করবেন (ফরম-'') এবং উপধারা () এর দফা () এর অধীনে প্রস্তুতকৃত যৌথ তালিকা স্থানীয় ভূমি অফিসের নোটিশ বোর্ডে এবং প্রকল্পের সুবিধাজনক স্থানে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে ধারা বা ধারা এর অধীন কোন স্থাবর সমপত্তি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলে জেলা প্রশাসক তদমোতাবেক দখল গ্রহণের অভিপ্রায় ব্যক্ত করে নির্ধারিত পদ্ধতিতে সংশ্লিষ্ট স্থাবর সম্পত্তির উপর বা তার নিকটবর্তী সুবিধাজনক দৃষ্টিগ্রাহ্য স্থানে একটি সাধারণ নোটিশ জারি করতে হবে এবং ধারা- এর অধীনে সরকারী রেকর্ড মোতাবেক স্বার্থসংশ্লিষ্ট মালিকগণ ক্ষেত্রমত তাদের বৈধ ওয়ারিশগণকে তাদের দাবি সংক্রান্ত আবেদন দাখিলের জন্য নোটিশ প্রদান করা হবে (ফরম-'') পরবর্তীতে ধারা এর () () উপধারা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট মালিকগণকে ক্ষতিপূরণ সম্পর্কে অবহিত করে নোটিশ প্রদান করা হবে (ফরম-'')

অতঃপর যেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; '' ফরমে দাগভিত্তিক যৌথ তদন্তের ফিল্ডবহি প্রস্তুত করা হয়ে থাকে যেখানে নিম্নোক্ত তথ্য সংক্রান্ত কলামসমূহ অন্তর্ভূক্ত থাকে,যেটি ভূমি অধিগ্রহণ শাখা কর্তৃক সম্পন্ন করা হয়ে থাকে; () মালিক/দখলকার/স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাম, পিতার নাম, ঠিকানা মোবাইল নং, স্বার্থের প্রকৃতি(জমির মালিক,দখলকার,বর্গাদার,লিজি,স্থাপনার মালিক,ফসলের মালিক ইত্যাদি), বাস্তব শ্রেণি (শুধুমাত্র জমির মালিক/দখলদারের ক্ষেত্রে), সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির দখলীয় জমির পরিমাণ, ফসল থাকলে উহার বিবরণ, গাছপালা থাকলে উহার সংখ্যা বিবরণ,ঘর-বাড়ি দালান-কোঠা থাকলে উহার বিবরণ, পুকুর থাকলে সংখ্যা বিবরণ,অন্যান্য স্থাপনার বিবরণ/অন্যান্য তথ্য ইত্যাদিএর পরে প্রত্যাশী সংস্থা কর্তৃক ফরম-'' তে প্রস্তুতকৃত অধিগ্রহণ প্রস্তাবিত জমির বিবরণী; যার তথ্যগুলো সাধারণতঃ স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে এই ফরমে যেসব তথ্যসমূহ সন্নিবেশিত থাকে- দাগ নং,জমির রেকর্ডীয় শ্রেণি,জমির বাস্তব অবস্থা/প্রকৃতি,জমির ব্যবহারের ধরণ,জমির উপরিস্থিত অবকাঠামোর বিবরণ এবং ফসল/গাছপালার বিবরণ ইত্যাদিএরপরে যে গুরুত্বপূর্ণ অংশটা,অধিগ্রহণ প্রস্তাবিত দাগভিত্তিক জমির মালিকানার প্রাথমিক তথ্য (ফরম-'') ফরমে যে তথ্যাবলী সন্নিবেশিত থাকে,দাগ নং,খতিয়ান নং,জমির শ্রেণি,সর্বশেষ রেকর্ড অনুযায়ী ভূমি মালিকের নাম ঠিকানা,নামজারী অনুযায়ী ভূমি মালিকগণের নাম ঠিকানা,জমির পরিমাণ নামজারী মামলা নং,নামজারী সম্পন্ন হয়নি এমন ক্রেতাগণের নাম,রেকর্ডীয়/নামজারীকৃত মৃত মালিকগণের ওয়ারিশদের নাম ঠিকানা ইত্যাদি মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারীকৃত পরিপত্রে ''-ফরমের নীচে নিম্নরূপ নির্দেশনাসমূহ দেয়া আছে-* ক্রমিক নং - প্রত্যাশী সংস্থা পূরণ করবে এবং এল শাখা যাচাই করবে *ক্রমিক নং - উপজেলা ভূমি অফিস ইউনিয়ন ভূমি অফিস পূরণ করবে

এখন মূল বিষয়ে আসা যাক, পিবিআই এর অনুকূলে অধিগ্রহণকৃত জমির যে অংশটুকু ইতোপূর্বে সড়ক জনপথ বিভাগের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছিল সেটা প্রকৃতপক্ষে কোন সময়ে অধিগ্রহণ করা হয়েছিল সেটা যথাযথ জানা না থাকায় বিষয়ে আলোকপাত করার ক্ষেত্রে কিছুটা বেগ পেতে হবে বৈকি ধরে নিলাম এই জমিটি ১৯৬৬-৬৭ সনের দিকে অধিগ্রহণ করা হয়েছিলআমাদের দেশে সর্বপ্রথম চট্টগ্রাম-কক্সবাজার অঞ্চলে বিআরএস রেকর্ডের মাঠজরিপ কার্যক্রম শুরু হয়এবং যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষে ১৯৮৭-৮৮ সনের দিকে চূড়ান্ত গেজেট আকারে প্রকাশিত রেকর্ড ভূমি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের বরাবরে হস্তান্তর করা হয়, যার ভিত্তিতে যাবতীয় ভূমি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়ে থাকে সাধারণতঃ যেটা দেখা যায়, সড়ক মহাসড়কের জন্য জমি অধিগ্রহণের সময় মূল সড়কের উভয়পাশে অতিরিক্ত কিছু জমি ভবিষ্যতে সড়ক সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে বাড়তি অধিগ্রহণ করা হয়ে থাকে এবং সে অংশটুকু প্রায়ই অব্যবহৃত থেকে যেতে দেখা যায় ফলে বাস্তবে দেখে বুঝা যায়না যে, খালি থাকা অংশটুকু আদৌ সড়কের জমি এখানে অধিগ্রহণকৃত জমি যদি চূড়ান্ত জরিপের আগেই হয়ে থাকে তবে ধরে নেয়া যায় জরিপ চলাকালে সড়ক নির্মাণ হয়নি বলেই চূড়ান্ত জরিপের খতিয়ানে এবং নকশায় এই জমি সড়ক হিসেবে প্রতিফলিত হয়নি তবে যেহেতু এই জমি সড়ক বিভাগের নামে চূড়ান্ত রেকর্ডে প্রতিফলিত হয়নি সেহেতু ধরে নেয়া যায় এই জমি সড়ক বিভাগের অনুকূলে জরিপের পরেই অধিগ্রহণ করা হয়েছে এবং উক্ত জমি অদ্যাবধি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে

অবস্থায় প্রশ্ন হলো একবার অধিগ্রহণকৃত জমি পুনরায় কি করে অন্য সংস্থার নামে অধিগ্রহণ হলো? এবং প্রকৃতপক্ষে কার বা কাদের কারণে একই জমির ক্ষতিপূরণ সরকারের তহবিল থেকে দ্বিতীয়বার প্রদানের ফলে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হলো? কিংবা অধিগ্রহণ নীতিমালায় বর্ণিত প্রক্রিয়াসমূহ পেরিয়ে আসার পর কেন বিষয়টি কারো দৃষ্টিগোচর হলোনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রথমতঃ অধিগ্রহণ পরবর্তীতে গেজেট প্রকাশিত হবার পর নিয়ম মোতাবেক সড়ক জনপথ বিভাগ তাদের নামে রেকর্ড সংশোধনের জন্য ভূমি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বরাবরে আবেদন না করার ফলে এবং বিধি মোতাবেক ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের উদ্যোগ গ্রহণ না করায় উক্ত জমির রেকর্ড অদ্যাবধি পূর্বতন মালিকের নামে রয়ে গেছে দ্বিতীয়ত '' এবং ''-ফরম মোতাবেক প্রকাশ্যে নোটিশ জা্রীর পর অন্য একটি সংস্থার নামে অধিগ্রহণ প্রস্তাবের বিষয়টি সড়ক জনপথ বিভাগের দৃষ্টিগোচর হবার কথা থাকলে তা হয়নি পরবর্তীতে '' ফরম অনুসারে রেকর্ড অনুযায়ী জ্ঞাত মালিককে ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত বিষয়ে অবহিত করে নোটিশ প্রদান করার পর সংশ্লিষ্ট মালিক ইতোপূর্বে একবার অন্য এলএ মামলায় ক্ষতিপূরণের অর্থ গ্রহণের বিষয়টি গোপন করেছেন পরবর্তী ধাপে '' ফরম অনুসারে দাগ ভিত্তিক যৌথ তদন্তের ফিল্ড বহি প্রস্তুতকালে বিষয়টি কোন না কোন ভাবে এলএ অফিসের জ্ঞাত হবার কথা থাকলেও অজ্ঞাত কারণে তা জানার বাইরে রয়ে গেছে এক্ষেত্রে দেখা যায়, ফিল্ড বহি প্রস্তুতকালে যথাযথ নিয়ম মেনে কার্য সম্পাদন করা হয়নি অন্যদিকে '' এবং '' ফরম অনুসারে উপজেলা ইউনিয়ন ভূমি অফিস সর্বশেষ মালিকানার তথ্য প্রদানকালে অফিস রেকর্ডে যেহেতু সড়ক জনপথ বিভাগের মালিকানা প্রতিফলিত হয়নি সেহেতু তারা অফিস রেকর্ডে সংরক্ষিত সর্বশেষ তথ্য সন্নিবেশ করেই হালনাগাদ তথ্য  সরবরাহ করেছেন তাজ্জব ব্যাপার মনে হলেও ঠিক এভাবেই একেক ব্যক্তি সংস্থার অবহেলা গাফেলতির কারণেই এমন একটা তুঘলকি কান্ড সংঘঠিত হয়েছে আরো যে প্রশ্ন সামনে উঠে আসে, কোন জমি অধিগ্রহণ হয়ে থাকলে সে সংক্রান্ত রেকর্ড কোথায় কোথায় সংরক্ষিত থাকে? তথ্য উপাত্ত এবং বিধি বিধান অনুযায়ী দেখা যায় সংক্রান্ত রেকর্ড ভূমি মন্ত্রণালয়,প্রত্যাশী সংস্থা এবং ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় সংরক্ষিত থাকার কথা এক্ষেত্রে

কেন্দ্রীয়  ভূমি বরাদ্দ কমিটি  কর্তৃক সিদ্ধান্ত নেয়ার পর ভূমি মন্ত্রণালয় শুধুমাত্র অধিগ্রহণ প্রস্তাব চূড়ান্ত অনুমোদন করে থাকে বাদবাকী বিষয়ে গৃহীতব্য নির্দেশনা মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত পরিপত্রে মাঠ পর্যায়ের কর্তৃপক্ষকে দেয়া আছে এরূপ অবস্থায় এলএ কর্তৃপক্ষের বিষয়টি অবশ্যই জানা উচিত ছিল যে, এই জমি ইতোপূর্বে একবার ভিন্ন সংস্থার নামে অধিগ্রহণ করা হয়েছিল

উপরোক্ত দু'টি ঘটনা থেকে যে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে আসে, শুধুমাত্র সংশ্লিষ্টদের সামান্যতম অবহেলা, দায়িত্বহীনতা এবং যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে কাজ না করার কারণেই এমন তুঘলকি কান্ডসমূহ ঘটতে পারে এবং তার ফলে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হওয়া সহ কিছু অসাধু ব্যক্তির হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার সুযোগ তৈরি হয় উভয় ঘটনায় প্রাথমিকভাবে প্রত্যাশী সংস্থার একমাত্র করণীয় অর্থাৎ অধিগ্রহণ পরবর্তী গেজেট প্রকাশিত হবার সাথে সাথেই যদি নিয়ম মেনে রেকর্ড পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়া হতো তবে পরবর্তী ঘটনাসমূহ ঘটার অবকাশ থাকতো না সার্বিক বিশ্লেষণে এটা পরিস্কার যে,প্রথমোক্ত ঘটনায় সুবিধাভোগী মালিক,সড়ক জনপথ বিভাগ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এবং দ্বিতীয় ঘটনায় অনুরুপ সুবিধাভোগী মালিক,সড়ক জনপথ বিভাগ এবং ভূমি অধিগ্রহণ কর্তৃপক্ষকেই মূলত দায়ী হিসেবে চিহ্নিত করা যায় (** সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির দায় দায় এর গুরুত্ব এবং  পরিমাণ নির্ণয় অবশ্যই স্ব স্ব কর্তৃপক্ষের এবং তদন্তের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার)

এর বাইরে ঘটনাসমূহের প্রেক্ষাপটে বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে অবধারিত যে সমস্ত পরিবর্তনসমূহ আনা আবশ্যক মর্মে প্রতীয়মান হয়ঃ

) অধিগ্রহণ সংশ্লিষ্ট চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশিত হবার পর ভূমি মন্ত্রণালয় আবশ্যিকভাবে গেজেটের এক কপি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবেন এবং এক কপি সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক এর নিকট প্রেরণকরবেনজেলা প্রশাসক গেজেটের অনুলিপি আবশ্যিকভাবে সংশ্লিষ্ট সহকারী কমিশনার(ভূমি) নিকট প্রেরণ করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নামজারী সম্পন্ন হবার বিষয়টি নিশ্চিত করবেন

) গেজেট প্রাপ্তির পর প্রত্যাশী সংস্থা বিনা ব্যর্থতায় রেকর্ড পরিবর্তনের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন এবং তা যথানিয়মে সম্পন্ন হবার বিষয়ে তদারকিক্রমে নিশ্চিত করবেন এক্ষেত্রে কোনরূপ আইনি জটিলতার সম্মুখীন হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দ্রুত উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন

)ভূমি মন্ত্রণালয় সরকারের সবক'টি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে এই মর্মে পরিপত্র জারী করবেন যে,স্ব স্ব মন্ত্রণালয়ের অধিনস্থ কোন দপ্তর/সংস্থার নামে এই পরিপত্র জারীর পূর্বে অধিগ্রহণ সম্পন্ন হওয়া কোন জমির নামজারী অদ্যাবধি সম্পন্ন না হয়ে থাকলে, সে সকল জমির নামজারী আবেদন আবশ্যিকভাবে আগামী       দিনের মধ্যে দাখিলক্রমে নামজারী প্রক্রিয়া সমপন্ন করতে হবে


সুমন চৌধুরী বিকু

গীতিকার, বাংলাদেশ বেতার

-মেইলঃ scbikuland@gmail.com

No comments:

Post a Comment

LAND MANAGEMENT

  The government's land acquisition activities and the subtle inconsistencies that remain deep (Suman Chowdhury Biku) --------------...