Powered By Blogger

Saturday 1 January 2022

 

পঁচিশ বিঘা পর্যন্ত কৃষি জমির ভূমি উন্নয়ন কর মওকুফ প্রথা বাতিল করা যে কারণে জরুরি

(সুমন চৌধুরী বিকু)

-------------------------------------------------------------------------------------------------------- 

পঁচিশ বিঘা পর্যন্ত কৃষি জমির ভূমি উন্নয়ন কর মওকুফের বিষয়টি সময়ের উপযোগিতায় একসময় জনমানুষের দাবি থাকলেও ক্রমান্বয়ে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে সে দাবি আর জনমানুষের দাবি হিসেবে থাকার কথা নয় এতে কোন সন্দেহ নেইনিগুঢ় বাস্তবতায় এর ফলে বরং সাধারণ মানুষের লাভের চেয়ে ক্ষতি হয়েছে বেশীস্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বারকয়েক সিদ্ধান্ত বদলের ফলে কোন কোন সময় এ প্রথা চালু থাকলেও ১৯৯১ সন থেকে অদ্যাবধি ৩১ বছর ধরে মওকুফের সিদ্ধান্তটি এখনো বলবৎ রয়েছেসেসময় অর্থাৎ ১৯৯১ সনে জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে দেশের প্রধান দু'টি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহারে এই একটি জায়গায় মিল ছিলসেটি হলো দু'দলই ক্ষমতায় গেলে ২৫বিঘা পর্যন্ত কৃষি জমির খাজনা মওকুফ করা হবেআর এই একজায়গায় মিল থাকার কারণে পরবর্তীতে যতবারই ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে সে সিদ্ধান্ত আর পাল্টায়নি

সরকারের রাজস্ব প্রাপ্তির কথা বাদ দিলেও যে বড় ক্ষতিটি হয়েছে, জনমানুষের সাথে মাঠপর্যায়ের ভূমি অফিসগুলোর দূরত্ব সৃষ্টিএসময়টাতে হাতগোণা কিছুসংখ্যক সচেতন লোকজন ব্যতীত নেহায়েতই দায়ে পড়া ছাড়া লোকজন বলতে গেলে আর ভূমি অফিসমুখো হয়নিফলে অনেকেই জানতে পারেনি একজন ব্যক্তির যক্ষের ধনের মতো আগলে রাখা একখন্ড ভূমির রেকর্ড সরকারের দপ্তরে কি হালে রয়েছেকেউ একজন হয়তো অনেকদিন পর কোন কাজে গিয়ে দেখতে পেয়েছেন তাতে ইতোমধ্যে লালকালিতে অনেক কাঁটাছেঁড়া হয়েছেএরপরে ওই ব্যক্তির মানসিক অবস্থা কি হতে পারে সেটা নিশ্চয় অনুমেয়এরকম ঘটার প্রকৃত এবং বাস্তব কিছু কারণও রয়েছেপ্রথমতঃ রেজিষ্ট্রি দলিলের অসঙ্গতি২০০৫খ্রিঃ সনে দলিলের হালনাগাদ ফরম্যাট প্রবর্তন ও দলিলে হস্তান্তরিত জমির সুনির্দ্দিষ্ট চৌহদ্দি এবং হাতনকশা অংকনসহ বিক্রেতার নামে প্রচারিত হালনাগাদ রেকর্ডের ভিত্তিতে দলিল সম্পাদনের বাধ্যবাধকতা রাখা হলেও এ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে হরহামেশাই নানা উপায়ে দলিল সম্পাদন ও রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন হচ্ছেঅন্যদিকে বন্টননামা ব্যতীত সহ-অংশীদারদের অগোচরে একাধিক দাগ-খতিয়ান উল্লেখক্রমে প্রাপ্যতা না থাকা স্বত্তেও তন্মধ্যে এক বা একাধিক দাগে জমি বিক্রি করার ফলে ওই দলিল দিয়ে নামজারী করতে গিয়ে অন্যের মালিকানা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেদ্বিতীয়তঃ এ জাতীয় দলিলের ভিত্তিতে নামজারী কার্যক্রমকালীন সময়ে সরেজমিন তদন্তপূর্বক দখল বিষয়ে নিশ্চিত না হওয়াও অন্যতম একটি কারণএক্ষেত্রে ভূমি উন্নয়ন কর প্রথা চালু থাকলে ভূমি অফিসে নিয়মিত যাতায়াতের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি অন্ততঃ জানতে পারতো সরকারের দপ্তরে তাঁর জমির রেকর্ডটি কি অবস্থায় আছে বা অক্ষত আছে কিনাসর্বোপরি এই দীর্ঘ সময়ে তথা একটানা একত্রিশ বছরে বলতে গেলে দু-দু'টি প্রাপ্তবয়স্ক প্রজন্মের ভূমি অফিসের সাথে কোনরূপ যোগসূত্র গড়ে ওঠারই সুযোগ হয়নি; যা বাস্তবিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল

বর্তমান আর্থসামাজিক বাস্তবতায় মানুষের জীবনযাত্রার মান যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনি ক্রমে জমির উপযোগীতা ও মূল্যমান অনেক বৃদ্ধি পেয়েছেফলে কৃষি জমির বিপরীতে বর্তমানে প্রচলিত ন্যূনতম করের হার যে কারো উপর বোঝাস্বরুপ হতে পারে তা বিশ্বাস করারও যৌক্তিক কোন কারণ নেই২৫ বিঘার উর্ধ্ব পরিমাণ প্রতিশতক কৃষি জমির করের হার ইতোপূর্বে ১৪০১ বাংলা সন থেকে ১৪২১ বাংলা সন পর্যন্ত ছিল ১.০০ টাকা, যেটা পরবর্তীতে ১৪২২ বাংলা সন থেকে অদ্যাবধি প্রতিশতক ২.০০ টাকাএমতাবস্থায় ভূমি উন্নয়ন কর মওকুফের বিধান প্রত্যাহার করা হলে যে পরিবারের ন্যূনতম ৪০ শতক জমি আছে তার ফি বছর করের পরিমাণ দাঁড়াবে মাত্র ৮০.০০ টাকাঅনেকেই হয়তো বলতে পারেন, সরকার খাজনা মওকুফ করলেও প্রতি খতিয়ানের বিপরীতে মওকুফ দাখিলা দেবার বিধান রেখেছেনযা পূর্বে অর্থাৎ ১৪২১ বাংলা সন পর্যন্ত ছিল প্রতি খতিয়ানের বিপরীতে ২.০০ টাকা এবং ১৪২২ বাংলা সন থেকে ১০.০০ টাকাকিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ভূমি অফিসগুলো কর্তৃক এরূপ দাখিলা প্রদানে অনীহা এবং কর প্রদানকারীকে নিরুৎসাহিত করা কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে নানা হয়রানির মুখোমুখি হবার শংকা থেকে সাধারণ মানুষ ভূমি অফিসমুখো হতে চায়নাকিন্ত যখন কর প্রদানে বাধ্যবাধকতা থাকবে তখন না চাইলেও তাঁদের যেতে হবেসবচেয়ে বড় কথা সরকারের জন্য এইখাতের রাজস্বপ্রাপ্তির বিষয়টিতে হয়তো বড় করে দেখার কিছু নেই, তবে শুধুমাত্র ভূমি ব্যবস্থাপনা ও রেকর্ড সংরক্ষণ সংক্রান্ত বিষয়ের সাথে মানুষের ব্যাপক সংযোগ স্থাপন এবং নিজস্ব মালিকানাধীন জমির ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বার্থজনিত সচেতনতা বৃদ্ধিসহ অনাকাঙ্খিত জটিলতা পরিহারকল্পে ভূমি উন্নয়ন কর মওকুফের বিধান বাতিল করা জরুরি

লেখকঃ গীতিকার, বাংলাদেশ বেতার

-মেইলঃ scbikuland@gmail.com


No comments:

Post a Comment

LAND MANAGEMENT

  The government's land acquisition activities and the subtle inconsistencies that remain deep (Suman Chowdhury Biku) --------------...